অ্যাসাইনমেন্ট-২০২১
৯ম
শ্রেণি- ১৮ তম সপ্তাহ
বিষয়ঃ বিজ্ঞান
এ্যাসাইনমেন্ট-
৪
শিরোনামঃ জীবনের জন্য পানি
নির্ধারিত কাজের উত্তর
ক) বুড়িগঙ্গার নদীর পানি মাছসহ অন্যান্য জীব বসবাসের জন্য উপযুক্ত
নয়। ব্যখ্যা করা হলোঃ
সীমাহীন দূষণের
কারণে বুড়িগঙ্গা এখন মৃত নদী। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের
কোঠায়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে ,
মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বসবাসের জন্য প্রতি লিটার পানিতে
অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে দ্রবীভূত
হাইড্রোজেনের মাত্রা কমপক্ষে ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে
অক্সিজেনের পরিমাণ দশমিকের ঘরে। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গায় প্রাণের অস্তিত্ব টিকে
থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের পরিবেশে যে সকল প্রাণী আছে তাদের মধ্যে জলজ
প্রাণীর জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। জলজ প্রাণী জলে জলজ পরিবেশ থেকে
খাদ্য গ্রহণ করে। জলেই বংশবিস্তার করে এবং বেশিরভাগ জলজ প্রাণী জল থেকে বেঁচে
থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে থাকে। জলজ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি
পাওয়া যায় মাছ। মাছ পানি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে , পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে এবং মাছ ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবণীয়
অক্সিজেন গ্রহণ করে। শহরের ঘরবাড়ি ও নর্দমার ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প কারখানা
থেকে নির্গত প্রাণী ও উদ্ভিদ আবর্জনাগুলো হচ্ছে জৈব আবর্জনা। সবচেয়ে বেশি
শিল্পজাত বর্জ্য নির্গত হয় চিনি , খাবার , কাগজ ও চামড়ার কলকারখানা থেকে। ওই সকল জৈব পদার্থ পার্শ্ববর্তী জলাধার
ও নদনদীর পানিকে দূষিত করে। খনি ও কলকারখানার ময়লা আবর্জনা , তৈল উত্তোলন ও পরিশোধন ক্ষেত্র , কৃষি ক্ষেত্র
ইত্যাদি উৎস থেকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে পানিতে
পচনশীল জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি হয়, সেগুলোকে বিশ্লিষ্ট
করার জন্য তত অধিক পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের
হ্রাস পায় ; যা জলজ প্রাণীর জীবনধারণের জন্য খুবই
ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় জলজ জীবের মৃত্যুও ঘটতে পারে। আর এ কারণেই বুড়িগঙ্গা নদীর
পানি দূষিত হচ্ছে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছের। পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন , বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানি
ও উৎকট গন্ধ থেকে আশপাশের এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে চর্মরোগ , শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। তাই বলা
যায় বুড়িগঙ্গার বুড়িগঙ্গা নদীর পানি সহ অন্যান্য জীবের বসবাসের অনুপযুক্ত।
খ) বুড়িগঙ্গার পাড়ে যদি কোন ফসলী জমি থাকে তাহলে তার সেচ
কার্যক্রম বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে করা সম্ভব নয়। আমার
উত্তরের পক্ষে যুক্তি দেওয়া হলোঃ
পানি আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ থেকে শুরু করে কৃষি শিল্প ও অন্যান্য ক্ষেত্রে
ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই পানির নির্দিষ্ট মান যদি না থাকে তবে জীববৈচিত্র্য বা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর হবে , তেমনি কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যবহার হবে ক্ষতিকর। কৃষিতে সেচকাজে খাল বিল ,
নদী বা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়। কৃষিতে লবণাক্ত পানি ব্যবহার
করা যায় না। শহরের ঘরবাড়ি ও নর্দমার ময়লা – আবর্জনা এবং শিল্প কারখানা থেকে
নির্গত শিল্পজ বর্জ; বিশেষ করে চামড়ার কারখানা থেকে
নির্গত আবর্জনা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত করছে। শিল্প বর্জ্য দিয়ে দূষিত পানি
সেচ কাজে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিতে পারে। সেই সাথে উদ্ভিদের
স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
সুতরাং বলা
যায় , বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে ফসলি জমিতে সেচ কার্যক্রম করা সম্ভব নয়।
ঘ) বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনগনের
সহায়তায় আমি যা করতে পারি তা নিম্নে উপস্থাপন করা
হলোঃ
পানির অপর নাম
জীবন। পানি ছাড়া একদিনও চলা আমাদের পক্ষেসম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রায় সব ধরনের
কাজে আমরা পানি ব্যবহার করে থাকি। আবার বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ।
কৃষির উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই কৃষিকাজে
সেচের জন্য দরকার হয় পানি। অর্থাৎ পানি ছাড়া কোনভাবেই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। উন্নত
বিশ্বের প্রতিটি দেশ শিল্পে অত্যন্ত উন্নত। এমন কোন শিল্প কারখানা নেই , যেখানে পানির প্রয়োজন হয় না। তাই বলা হয়ে থাকে , উন্নয়ন
ও পানি একে অপরের পরিপূরক। মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে
বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা শহরের বাসাবাড়ী ও নর্দমার ময়লা আবর্জনা এবং চামড়া
কারখানা থেকে নির্গত আবর্জনা ।
বুড়িগঙ্গাকে
স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আমি যেসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি তা নিম্নে হলোঃ
১. সর্বস্তরের
মানুষকে পানি দূষণ সম্পর্কে সঠিক প্রয়োজন এবং এর প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহ চিত্র
জনসাধারণের নিকট তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রয়োজন বোধে লিফলেট ,
পোস্টার , সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন- ফেইসবুক) বা জাতীয়
প্রচার মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।
২. শহর ও বাসা
বাড়ির আবর্জনা নর্দমার বর্জ্য , নদ-নদী,
খাল বিল গড়িয়ে পড়ার আগে শো করা উচিত। এ জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির
এবং প্রয়োজনবোধে কমিটি করে আইন তৈরি করা ও আইন অমান্যকারীকে আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা করা।
৩. নদীর পানির প্রবাহ
অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যক। নদীর তলদেশে যাতে পলি জমতে না পারে সে জন্য নিয়মিত ড্রেজিং প্রয়োজন।
৪.কৃষি জমিতে
জৈব সার এবং পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত। ফলে অতিরিক্ত সার
জলাশয় এর পানিকে দূষিত করতে পারবে না।
৫. শিল্প ও
কলকারখানার বর্জ্য পার্শ্ববর্তী জলাশয় ও নদ নদীতে পড়ার পূর্বে শোধন করা প্রয়োজন।
৬. খোলা মাটিতে রাসায়নিক দ্রব্য , রং অথবা গাড়ির
তেল কথনো ফেলা উচিত নয়। কেননা এ সমস্ত দ্রব্য মাটি চুয়িযে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত
করে।
৭. কীটনাশক,
ছত্রাক নাশক ও আগাছানাশক এর যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
এক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৮. রান্নাঘরের
নিষ্কাশন , নালায় ও টলেটে রাসায়নিক বর্জ্য না ফেলতে শহরের মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।
জনসচেতনতাই
পারে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ রক্ষা করতে। সর্বোপরি ,
সকল স্থানীয় লোকদের সহায়তায় বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায়
ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।